ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর ফার্মগেটে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কার্যালয়ে ‘কেলেঙ্কারির অর্থনীতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, “আমরা স্বৈরাচার সরালাম, কিন্তু এখনো নিশ্বাস নেওয়ার জায়গায় সংকুচিত অনুভব করি। বলা হয়, দল যার যার, দেশ সবার। কিন্তু বাস্তবে দেশ সবার না, যার ক্ষমতা আছে, দেশ তার।”
সরকারি বাজেট কাঠামোয় বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে থাকার কথা বললেও তাদের বাজেটে দেখা গেছে, শহুরে মধ্যবিত্তদের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, অথচ প্রান্তিক ও গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ অত্যন্ত কম। ফলে এই শ্রেণিগুলো এখনো সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে সাংবাদিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি আগ্রাসী পাঠকগোষ্ঠী, যারা সরকার বা মালিকপক্ষের বাইরেও ‘নৈতিক খবরদারি’ করতে চায়। এরা এতটাই উগ্র যে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার কথা পর্যন্ত বলে, এমনকি প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকিও দেয়।”
সাংবাদিকতা, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পারস্পরিক সম্পর্ক তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, “সাংবাদিকরা দুর্বল হলে নাগরিক সমাজ দুর্বল হবে, রাজনীতি দুর্বল হবে এবং উৎপাদনশীল অর্থনীতিও দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে করে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়বে।”
অনুষ্ঠানে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্স প্রতিবেদন তৈরি হলেও সেগুলোর বাস্তবায়নে সরকারের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। বরং আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি সংস্কারবিরোধী জোট গড়ে উঠেছে।”
তিনি বলেন, “যেসব রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের উচিত অর্থনীতি বিষয়ে তাদের পরিষ্কার অবস্থান জনসমক্ষে তুলে ধরা।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমীন নীলরমি বইটির প্রসঙ্গে বলেন, “এতে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম থাকলেও, হুকুমদাতাদের নাম অনুপস্থিত।”
বইটির লেখক শওকত হোসেন মাসুম বলেন, “গত কয়েক দশকে ব্যাংক, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে কীভাবে পরিকল্পিতভাবে লুটপাট হয়েছে, তার তথ্য-উপাত্ত এবং উদাহরণ বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বইটিকে সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেন এবং অর্থনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...