ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, “একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর চারপাশে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য আমরা কাজ করছি, যাতে ভবিষ্যতের নির্বাচন জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়।”
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন উপলক্ষে আয়োজিত 'জুলাই স্মরণ' অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট—একটি এমন সমাজ গড়া, যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষ শান্তি, মর্যাদা, স্বাধীনতা ও গর্বের সঙ্গে বসবাস করতে পারে। সংস্কার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, রাজনৈতিক নেতা, ভুক্তভোগী পরিবার, তরুণ প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমার আবেদন হচ্ছে, জাতির গভীরে যে বিভাজন ও ঘৃণার বীজ রয়ে গেছে, তা থেকে মুক্তি পাওয়াই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি কেবল কাগজে-কলমে সংস্কার নয়, এটি মানসিক ও নৈতিক পরিবর্তনের বিষয়।”
তিনি উল্লেখ করেন, “ন্যায়বিচার কেবল শাস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আর কখনো জনগণের বিরুদ্ধে দমন, নিপীড়ন বা ধ্বংসের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।”
উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলি নিয়ে একটি স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান মিশন পরিচালনা করে। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ১,৪০০ জনের প্রাণহানি, পরিকল্পিত ও রাষ্ট্রীয় মদদে পরিচালিত সহিংসতার তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যেমন বিবিসি ও আল-জাজিরাও তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে একই তথ্য নিশ্চিত করে।
ড. ইউনূস বলেন, “জাতিসংঘ শুধু অপরাধ নথিভুক্ত করেনি, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে লক্ষ্যে কার্যকর ও সুসংগঠিত সুপারিশমালা দিয়েছে। আমরা এগুলোকে বাইরের চাপ নয়, নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে সরকার দণ্ডবিধি সংশোধন করেছে এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগ দিয়েছে। চলতি মাসে ওএইচসিএইচআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে, যার ফলে ঢাকায় একটি সহযোগী মিশন স্থাপন করা হবে। এই মিশন রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গত ১৬ বছরে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দখল হয়ে গেছে, স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং সহিংসতা হয়ে উঠেছে শাসনের প্রধান হাতিয়ার। তবে গত জুলাইয়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে এ বাস্তবতা প্রত্যাখ্যান করেছে।”
জাতিসংঘের অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, রোহিঙ্গা সংকট থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের অন্ধকার সময়েও জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। তাদের সহযোগিতা ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে গত মার্চে বাংলাদেশ সফরের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং মানবাধিকার কমিশনার ফলকার টুর্ক, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুইন লুইস এবং সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানকেও ধন্যবাদ জানান।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...