ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন প্রধান উপদেষ্টা | ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এতে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতাকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবেই এ ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে দেশের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক ব্যবস্থার সংস্কার, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের ২৮ দফা পয়েন্টে একদিকে যেমন স্বাধীনতা-পরবর্তী রাষ্ট্র ব্যবস্থার ক্রমাবনতি, আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ ও জনগণের ওপর সংঘটিত নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে; অন্যদিকে তেমনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের যৌক্তিকতা এবং জনগণের প্রত্যাশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ:
* ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে একই ধারাবাহিকতা হিসেবে চিহ্নিত করে তাতে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়েছে।
* উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১/১১-এর পরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার জনগণের মতপ্রকাশ, ভোটাধিকার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে একটি একদলীয় শাসন কায়েম করে।
* ঘোষণাপত্রে দাবি করা হয়, গত ১৬ বছরে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক লুট, পরিবেশ ধ্বংস এবং শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
* তিনটি জাতীয় নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) ‘প্রহসনের নির্বাচন’ হিসেবে উল্লেখ করে জনগণের প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
* ছাত্র আন্দোলন, চাকরি প্রত্যাশীদের বৈষম্য, কোটাবিরোধী আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে চালানো ‘রাষ্ট্রীয় বর্বরতা’কে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
* বলা হয়, এই আন্দোলনে নারী-শিশুসহ প্রায় হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং অগণিত মানুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জনগণের সর্বাত্মক গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
* সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
* ঘোষণাপত্রে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ভবিষ্যৎ সরকার সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনবে এবং এই ঘোষণাপত্রকে তার তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করবে।
* পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণের কথাও গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ঘোষণাপত্রে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করে তার ইতিহাস সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একইসঙ্গে আন্দোলনের শহীদ, আহত এবং নিপীড়িতদের পরিবারকে আইনি সুরক্ষা ও সম্মান দেওয়া হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দল বা আন্দোলনের দলিল নয়, বরং রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দিকে এক শক্তিশালী জনগণকেন্দ্রিক পদক্ষেপ।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...