ছবি : সংগৃহিত
বিজ্ঞাপন
শিশুরা অধূমপায়ী হলেও, প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের পরিবারের কোনো সদস্য, পাবলিক প্লেস বা অন্য কোনো জায়গায় তারা ধূমপায়ীর সংস্পর্শে এসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, পরোক্ষ ধূমপান শিশুদের মধ্যে রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান কারণ। ফলে অসংখ্য শিশুমৃত্যু এবং শিশুদের মধ্যে অক্ষমতা দেখা দেয়।
পিয়ার-রিভিউ জার্নাল রেসপিরেটরি রিসার্চে (২০২৫) প্রকাশিত গবেষণায় পরোক্ষ ধূমপানে বিশ্বব্যাপী কতজন শিশু আক্রান্ত হয়, কীভাবে পরিবর্তন হয় এবং ঝুঁকি বজায় রাখে বা বৃদ্ধি করার কারণগুলো খোঁজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলগুলো আগের ধারণাগুলোকে ব্যাপকভাবে অতিক্রম করেছে এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূরক ব্যবস্থাগ্রহণের ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
গ্লোবাল বার্ডেন ডেটা কী বলছে:
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজেস ২০২১-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে পরোক্ষ ধূমপানে বয়স-মানসম্মত এক্সপোজার লেভেল সামন্য হ্রাস পায়। কিন্তু পরোক্ষা ধূমপানের কারণে মৃত্যু এবং অক্ষমতাযুক্ত জীবন দৈনিকহারে বছরের সব সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বার্ধক্যের কারণে সম্ভব হয়নি। তবে ২০২১ সালেও শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। গবেষণা বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে থাকে।
শিশুর শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা ও মৃত্যুহার:
অন্য একটি গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, ২০১৯ সালে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ মৃত্যু পরোক্ষ ধূমপানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে পারে। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা বিশেষভাবে গুরুতর এবং স্বাস্থ্যকর জীবনকাল হ্রাসের হার এখনো বেশি। আর দক্ষিণ এশিয়ায় যা হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা বেশ ধীর।
অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য থেকে দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপানসহ তামাকের ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসা শিশুদের বৃদ্ধি বেশ কম (বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম) হওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যা মাতৃ ধূমপান ও জন্মের পর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হয়। ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫ কোটি শিশুর বৃদ্ধি কম হয়েছে। যা পরোক্ষ ধূমপানসহ একাধিক কারণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
পরোক্ষ ধূমপানের কারণে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হাঁপানির সমস্যা তীব্র হওয়া, কানের সংক্রমণ ও শৈশবের শেষ দিকে ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস হওয়ার ঝুঁকি বেশ বাড়ে। এমনকি আণবিক গবেষণা বলছে, পরিবারে পরোক্ষ ধূমপানের সংস্পর্শে আসা শিশুদের মধ্যে ডিএনএ মিথাইলেশনের পরিবর্তন দেখা গেছে, যা পরোক্ষ ধূমপান রোগের সংবেদনশীলতাকে প্রভাবিত করে এমন সব জিনের প্রকাশকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব পরিচালনায় প্রধান চ্যালেঞ্জ:
শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষেত্রে প্রধান উৎস হচ্ছে বাড়িতে পরিবারের কারও ধূমপানের ধোঁয়ার সংস্পর্শ। পাবলিক প্লেসে থাকা নিষেধাজ্ঞা বা নিয়মকানুন প্রায় সেসব জায়গায় কার্যকর হলেও অনেক শিশু তাদের নিজ বাড়িতে, গাড়িতে বা তাদের দায়িত্বভার যাদের ওপর অর্পিত; তাদের মাধ্যমে ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসে।
আবার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণগুলোর মধ্যে নিম্ন আর্থ-সামাজিক-জনসংখ্যা সূচক অঞ্চলের পরিবার, জনাকীর্ণ বাড়ি, দুর্বল বায়ু চলাচল, সচেতনতা কম ও কম নিয়ন্ত্রক প্রযোগ ঝুঁকি বাড়ায়।
কী সহায়ক হতে পারে:
ধূমপানের সংস্পর্শে থাকা শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলা প্রধান সমস্যা, এরপরও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নগর পরিকল্পনাবিদ, সরকার, যত্নশীল ও পরিবারগুলো একত্রিত হলে পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো-
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের অভ্যন্তরীণ জায়গায় শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং তা প্রয়োগ করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। অনেক যত্নশীল ব্যক্তি ধূমপানের ঝুঁকিকে মূল্যায়ন করেন না, বিশেষ করে বাসা-বাড়ির ভেতরে ধূমপানকে। ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী উভয়ের জন্যই শিক্ষামূলক প্রচারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাতাস চলাচলের জায়গা উন্মুক্ত বা উন্নত করা যথেষ্ট কার্যকর নয়। ধূমপানের ধোঁয়ার উৎস্য এড়িয়ে চলা জরুরি। উদাহরণ- ধূমপায়ীদের দরজা-জানালা থেকে বেশ ধূরে গিয়ে ধূমপান করা উচিত। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলা জরুরি। তা না হলে এর প্রভাব জরায়ুতে পড়ে (শিশু জন্মর সময় ওজন কম ও অকাল জন্ম)।
স্বাস্থ নীতিমালায় শিশুদের মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের সংস্পর্শ পর্যবেক্ষণ, স্বাস্থ্য জরিপে সংস্পর্শের প্রশ্নাবলী একীভূত করা এবং নিয়মিত শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পরোক্ষ ধূমপান কখনো হালকা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এটি বিশ্বজুড়ে শিশুদের মধ্যে অসুস্থতা, বিকাশের ব্যাঘাত ও মৃত্যুর জন্য প্রধান কারণ। যদিও বিশ্বের কিছু অঞ্চলে এর সংস্পর্শের মাত্রা কমছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বার্ধক্য ও অসম নীতির কারণে অনেক অঞ্চলের শিশুরা এখনো ভোগান্তিতে রয়েছে। শ্বাসযন্ত্রের রোগের কারণে মৃত্যু থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি এপিজেনেটিক পরিবর্তন পর্যন্ত সব প্রমানাদি এতটাই শক্তিশালী, যা অবহেলা করা যায় না। আর শিশুদের পরোক্ষ ধূমপান থেকে রক্ষা করতে নীতি, সচেতনতার পাশাপাশি পরিবার ও প্রতিবেশীদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...