বিজ্ঞাপন
গত ১০ আগস্ট রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ টোল প্লাজার পাশ থেকে ঢাকা মেট্রো-ব-১২-৪৪৪৫ নম্বর লেখা প্লেট লাগানো এই বাসটি আটক করে ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের আভিযানিক দল। তল্লাশি করে পেছনের সিটের নিচে বিশেষ চেম্বার থেকে উদ্ধার করা হয় ১০ হাজার পিস ইয়াবা। ঘটনাস্থল থেকে বাসচালক সাদ্দাম হোসেন, সুপারভাইজার সাজ্জাদ হোসেন ও হেলপার রকি শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মূল মালিক মো. ইব্রাহীম এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—বাসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে নাটোরের একটি নন-এসি বাসের রেজিস্ট্রেশন নম্বর। অর্থাৎ একই নম্বরের দুটি বাস বর্তমানে সড়কে চলছে। নাটোরের আসল বাসটি নিয়মিত যাত্রী বহন করছে, আর নকল নম্বরপ্লেটের বিলাসবহুল বাসটি মাদক পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছিল। জব্দকৃত বাসটি বর্তমানে গেণ্ডারিয়ার ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে রাখা হয়েছে।
গ্রেপ্তার চালক সাদ্দাম হোসেনের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ৯ আগস্ট রাতে কক্সবাজার থেকে যাত্রার পর রেলস্টেশন এলাকায় কিছু ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাস থামিয়ে তল্লাশি চালায়। তারা গোপন চেম্বার থেকে তিন ব্যাগ ইয়াবা নিয়ে যায় এবং চালককেও আটক করে। পরে বিকল্প চালক বাসটি ঢাকায় নিয়ে আসে।
ডিএনসির রমনা সার্কেলের পরিদর্শক জাকির হোসেন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তদন্ত করছেন ডিএনসির এসআই রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, “তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।”
জব্দ বাসটি ‘গ্রিন সেন্টমার্টিন এক্সপ্রেস’ ব্যানারে চলছিল। তবে এর কোনো রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ৪৩ আসনের এই বাসের ১৫টি স্লিপার এবং ২৮টি বিজনেস ক্লাসের সিট ছিল। নাটোরের আসল বাসটির মালিক পাবনার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। ইফাদ অটোস থেকে ব্যাংক ঋণে কেনা সেই বাসের কাগজপত্র এখনো ইফাদের নামে। ইফাদের কর্মকর্তা সাইফুর রহমান নিশ্চিত করেন যে, একই নম্বরের আরেকটি বাস নিয়মিত যাত্রী বহন করছে।
গ্রিন সেন্টমার্টিন এক্সপ্রেসের মালিক সৈয়দ রানা জানান, গত জানুয়ারিতে চার বছরের জন্য কোম্পানির ব্যানার মো. ইব্রাহীমের কাছে ভাড়া দেন। ইব্রাহীমের প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান সুজন বলেন, “১০–১২ দিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলের পরই বাসটি ইয়াবাসহ ধরা পড়ে। ইব্রাহীম সম্প্রতি বিদেশে গেছেন।”
বিআরটিএ সূত্র জানায়, স্লিপার সিটের বাস রেজিস্ট্রেশনের অনুমোদন দেওয়া হয় না। সাধারণ সিটের বাস রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারি কোষাগারে ৬৭ হাজার ৬২০ টাকা জমা দিতে হয় এবং প্রতি বছর নবায়ন ফি ৪৯ হাজার ৫০৭ টাকা। নকল নম্বরপ্লেট ব্যবহারের ফলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে। সংস্থাটির ধারণা, মালিকপক্ষ মাদক বহনের প্রমাণ এড়াতেই রেজিস্ট্রেশন করেনি।
বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, “মোটরযান অধ্যাদেশ আইন ও বিধি অনুযায়ী ভুয়া কাগজপত্র এবং নকল রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে গাড়ি চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর জন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের জেল অথবা এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।”
ডিএনসির জব্দ অভিযান ও নকল নম্বরপ্লেটের এই কাণ্ডে সড়ক নিরাপত্তা ও মাদক নিয়ন্ত্রণের ফাঁকফোকর আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...