Logo Logo

জীবন ফুরালেও সওয়াব থামে না— ইসলামী দৃষ্টিতে চলমান নেক আমল

মৃত্যুর পরও সওয়াব বন্ধ হয় না! জানুন সেই ১০ আমল যা কবরেও প্রবাহিত থাকে


Splash Image

ইলম, দান ও সন্তান— যে তিন আমল মৃত্যুর পরও চিরজীবী থাকে

ইসলামে এমন কিছু নেক আমল আছে, যেগুলোর সওয়াব মৃত্যুর পরও চলতে থাকে। জানুন কোন আমলগুলো কবরেও সওয়াবের ধারা অব্যাহত রাখে এবং কীভাবে আপনি তা অর্জন করতে পারেন।


বিজ্ঞাপন


জীবন ও মৃত্যু—মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য দুটি অধ্যায়। একটি পার্থিব, অন্যটি পরলৌকিক ও অনিবার্য। মানুষ মৃত্যুর আগে যে নেক আমল করে, তার প্রতিদান আল্লাহ তাআলা আখিরাতে প্রদান করেন। তবে ইসলামে এমন কিছু বিশেষ আমল আছে, যেগুলোর সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে—অর্থাৎ মানুষ কবরেও থাকলেও তার আমলনামায় সওয়াব যুক্ত হতে থাকে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

“যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন—তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে কে শ্রেষ্ঠ।”

(সূরা আল-মুলক, আয়াত ২)

হাদিসে এসব চলমান আমলকে সদকায়ে জারিয়া বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন বর্ণনায় এসব আমলের মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন। নিচে সংক্ষেপে এমন কিছু আমল উল্লেখ করা হলো, যেগুলোর সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে।

ইলম শিক্ষা দেওয়া:

যে ব্যক্তি উপকারী জ্ঞান শিক্ষা দেয়, যতদিন সেই জ্ঞান অন্যরা কাজে লাগাবে, ততদিন শিক্ষক সওয়াব পেতে থাকবে। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ২৪০)

সৎ সন্তান রেখে যাওয়া:

রাসুল (সা.) বলেছেন, মৃত্যুর পর মানুষের তিনটি আমল চলমান থাকে—সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম এবং নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম, হাদিস: ৪৩১০)

মসজিদ নির্মাণ:

যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ তৈরি করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি করেন। (মুসলিম, হাদিস: ১২১৮)

কোরআন বিতরণ:

যে ব্যক্তি কোরআন বিতরণ করে, যতদিন তা পাঠ করা হবে, তার সওয়াব প্রবাহিত হতে থাকবে। (মুসনাদুল বাজ্জার: ৭২৮৯)

গাছ রোপণ করা:

কোনো মুসলিম যদি বৃক্ষরোপণ করে এবং মানুষ বা প্রাণী যদি তা থেকে উপকৃত হয়, সেটি সদকাহ হিসেবে গণ্য হয়। (মুসলিম, হাদিস: ৪০৫০)

অভাবগ্রস্তদের জন্য আশ্রয় তৈরি করা:

যে ব্যক্তি দরিদ্রদের জন্য ঘর বা আশ্রয়স্থল তৈরি করে দেয়, তার জন্য মৃত্যুর পরও সওয়াব চলতে থাকে। (ইবনু খুযাইমাহ: ২৪৯)

খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা:

রাসুল (সা.) বলেন, “প্রত্যেক সজীব প্রাণীকে পানি পান করানোর জন্য সওয়াব রয়েছে।” (বুখারি, হাদিস: ৬০০৯)

সীমান্ত রক্ষা করা:

যে ব্যক্তি ইসলামী সীমান্ত পাহারা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে, তার আমল ও রিজিক মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ২২৩৪)

প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা করা:

যে ব্যক্তি পানির ঝর্ণা বা কূপ তৈরি করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নির্ধারণ করেন। (বুখারি, হাদিস: ২৭৭৮)

আল্লাহর পথে আহ্বান করা ও কল্যাণকর বই রচনা:

যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে বা কল্যাণকর বই রচনা করে, তার আমল চলতে থাকে যতদিন মানুষ তার মাধ্যমে উপকৃত হয়। (মুসলিম, হাদিস: ৬৯৮০; তিরমিজি, হাদিস: ২৬৭০)

এই সব আমল প্রমাণ করে—মানুষের জীবনের প্রকৃত সাফল্য কেবল দুনিয়ায় নয়, মৃত্যুর পরও যেন তার সওয়াব প্রবাহিত থাকে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এমন নেক কাজ করা, যা তার মৃত্যুর পরও তার জন্য জান্নাতের পথ প্রশস্ত করে রাখবে। সদকায়ে জারিয়া, জ্ঞান বিতরণ, দান ও মানবকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে আমরা এমন উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারি, যা আমাদের জন্য মৃত্যুর পরও চিরস্থায়ী সওয়াবের উৎস হয়ে থাকবে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...