বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি । দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদদক) এ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করবে। ওই ৩ জনকে টাকা ও প্রাইভেটকার সহবৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারেপাঠানো হয়েছে।
আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশসুপার মোঃ সারোয়ার হোসেন মুঠোফোনে সাংবাদিকদের এ তথ্যজানিয়েছেন ।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) নিয়মিত তল্লাশি চলাকালে শহরের পুলিশলাইন্স মোড়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি প্রাইভেট কার থামিয়েতল্লাশি করা হয়। এ সময় প্রাইভেট কারের ভেতরে থাকা একটি ব্যাগের২টি খামে মোট ১০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাইভেটকারের আরোহী ও শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত পিয়নমোশারফ হোসেন (৬০) অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন।
বিষয়টি সন্দেহজনক হলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাপ্রাইভেট কার ও টাকা জব্দ করেন। পরে তারা পিয়ন ও চালককে আটককরে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে যান ।
আটক মোশারফের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চর খসরু গ্রামে।আর প্রাইভেট কারের চালক হলেন শরীয়তপুরের দক্ষিণ মধ্যপাড়াএলাকার মো. মনির হোসেন (৪০)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তিবলেন, শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের কাজের দরপত্রের অনুমোদনেরজন্য ওই টাকা গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীও জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে দেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল।টাকার খামের ওপর ‘সার্কেল’ অর্থাৎ গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলেরতত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিকরুল ইসলামের দপ্তরের নাম উল্লেখ ছিল।
তবে আটক মোশারফ হোসেন তল্লাশিচৌকিতে পুলিশকে বলেছিলেন, এই টাকা গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলের উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদহোসেনকে দেওয়ার জন্য এনেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তিজানান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম ও তত্ত্বাবধায়কপ্রকৌশলী জিকরুল ইসলাম ঘুষকান্ড থেকে বাঁচতে কৌশলে সব কিছুম্যানেজ করছেন। তারা এ ঘটনার দায় নিরপরাধ উপসহকারী প্রকৌশলীসাজ্জাদ হোসেনের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন । তারা আরো বলেন, আওয়ামীলীগের সময়ে পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ ভায়া নাজিরপুর সড়ক উন্নয়নপ্রকল্পের ১২৬ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা মূল্যের ২য় প্যাকেজটি সাদেকুলইসলাম শতকরা ৮.৩১% উর্ধ্বে ১৩৬ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকায় চুক্তি করেন। অতিরিক্ত ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা তিনি ঘুষ হিসেবে প্রদান করতেঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করেন ।
গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, অতিরিক্তপ্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরে টাকা ছাড়া কিছুইহয়না। তারা এখান থেকে কোটি-কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য করছেন। তারা শরীয়তপুর সহ ৫টি সড়ক বিভাগের প্রতিটি কাজ থেকে জোর করে২% করে ঘুষ নেন । বেতন থেকে বাসা ভাড়া বাবদ টাকা কর্তন করেননা। সরকারি ডুপ্লেক্স বাস ভবনের পরিবর্তে তারা পরিদর্শন বাংলোতেঅবস্থান করেন। তারা সরকারী খরচে আয়েশী জীবনযাপন করেন।অধীনের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে দুব্যাবহার করে আসছেন । তাদের কর্মকান্ডে গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেল ও জোনের কর্মকর্তা এবংকর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার (ছাওবান) বলেন, জোনেরঅতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম আমার কাছে ২% টাকাদবি করেন । আমি জোর করে দেড় পার্সেন্ট টাকা দিয়েছি। টাকা না দিলেনিজেই কাজের সাইড পরিদর্শণে যান। বিভিন্ন রকম সমস্যা করেন।কখনো-কখনো কাজ বন্ধ করে দেন। এ কারণে ঠিকাদাররা বাধ্য হয়েটাকা দেন।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিকরুলইসলাম বলেন, কাকে দেওয়ার জন্য ওই টাকা আনা হয়েছিল, তা আমিজানি না। ওই খামে আমার দপ্তরের নাম লেখা ছিল কিনা তা আমিদেখিনি । আটক পিওন শরীয়তপুর সড়ক বিভাগ থেকে অনেক আগেইঅবসরে যায়। পুলিশ উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হেসেনকে কেনআটক করল তা আমারও প্রশ্ন । টাকা উদ্ধারের সময় সাজ্জাদ ঘটনাস্থলেছিল না । কোনভাবেই সে এ কাজের সাথে যুক্ত নয়। আমিও ঘটনারদিন ঢাকা ছিলাম। কাজের জন্য আমাদের দপ্তরে ২% টাকা নেওয়ারঅভিযোগ সত্য নয়। আমি এখানে ১ বছর ধরে কর্মরত। এখানে ২% আদায় করতে দেখিনি । এ ছাড়া আমি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবেকোনো ঠিকাদারের বিল কিংবা টেন্ডার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত নই। আমিগোপালগঞ্জে আসার আগে থেকেই এ সরকার নতুন একটি নিয়ম চালুকরেছে—এখন থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী তাঁর দপ্তর থেকেই সব ধরনেরটেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।’
অভিযোগের বিষয়ে বিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলেরঅতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলামকে বারা বার ফোন দিলেওতিনি ফোন ধরেন নি। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) পুলিশ লাইনস মোড় থেকে ১০ লাখ টাকাসহ দু’জনকে আটক করা হয় । এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগেরউপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনাহয় । বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ৩ জনকে প্রাইভেটকার ও টাকা সহআদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দুদকমামলা করবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকরাম প্রসাদ মন্ডল বলেন, যদি দুদকের সিডিউল ভূক্ত অপরাধসংগঠিত হয়। সেক্ষেত্রে সাধারণত দুদক মামলা করে থাকে। থানাআটক করলেও দুদকের সিডিউলভূক্ত মামলা থানা করতে পারে না। এ মামরা দুদকের করার নির্দেশনা রয়েছে ।তবে এখনো এ সংক্রান্ত কোননথি আমাদের কাছে আসেনি । তাই নথি হাতে পেলে, তা দেখে পরবর্তীপদক্ষেপ গ্রহন করা হবে ।
উল্লেখ্য, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জসড়ক বিভাগ গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেল ও জোনের অন্তর্ভূক্ত।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...